বরগুনা প্রতিনিধি, চ্যানেল নিউজ : অনুমতি ছাড়া অন্যের জায়নামাজে নামাজ পড়া যাবে না এমন মাশআলাকে কেন্দ্র করে ঘুষি মেরে ইমামকে রক্তাক্ত করার এলাকাবাসী ও মসজিদে আগত বরযাত্রীদের মধ্যে মারামারি ঘটনা ঘটে।
ঘটনাটি ঘটেছে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের উত্তর বড় লবণ গোলা মোতাহার উদ্দিন জামে মসজিদের রবিবার (০৮ জুন) জোহরের নামাজের সময়ে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। জখম অবস্থায় উভয় পক্ষের দশজনকে বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ও জাকির হোসেন নামে একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
জানা গেছে, রবিবার দুপুরের দিকে বুড়িরচর ইউনিয়নের চরকগাছিয়া গ্রামের ৩০-৩৫ জনের এটি বরযাত্রী উত্তর বড় লবণ গোলা গ্রামের জনৈক মনির হোসেনের বাড়িতে মেহমান হিসেবে আসেন। পথিমধ্যে যোহরের নামাজ আদায়ের জন্য উত্তর বড় লবণ গোলা মোতাহার উদ্দিন মাস্টার বাড়ি জামে মসজিদে ঢোকেন। মসজিদের ভিতরে ২০-২৫ টি জায়নামাজ বিছানো ছিল। আগত মেহমানরা বিছানো জায়নামাজে দাঁড়িয়ে সুন্নত নামাজ আদায় করেন। ফরজ নামাজ আদায়ের পূর্বে উপস্থিত ইমাম মোঃ আসাদুজ্জামান জিলান মাশআলা দেন- অনুমতি ছাড়া অন্যের জায়নামাজে নামাজ পড়া যাবে না। এমন মাশআলার আগত মেহমানরা উত্তেজিত ইমামের প্রতি মারমুখী হয়ে ওঠেন। মেহমানদের উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য স্থানীয়রা চেষ্টা করলেও বর যাত্রীদের কয়েকজন ইমাম আসাদুজ্জামান জিলানকে নাকে ঘুসি মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। বর যাত্রীদের সংখ্যা ছিল ২৫-৩০ জন এবং স্থানীয়দের সংখ্যা ছিল ৪৫ জন। বরযাত্রীরা মসজিদের ভেতরের গেট আটকিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের বেদম মারধর করেন। মারধর শেষে নামাজ আদায় না করে বরযাত্রীরা বেরিয়ে গেলে এলাকাবাসী তাদের উপর চড়াও হয় এবং ব্যাপক মারধর করেন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে বুড়িশ্চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ হুমায়ুন কবিরকে মুঠোফোনে অবহিত করলে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। পুলিশ আহতদের উত্তর করে বরগুনা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
স্থানীয়দের মধ্যে ভর্তিকৃতরা হলেন উত্তর বড় লবণ গোলা মোতাহার উদ্দিন বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আসাদুজ্জামান জিলান, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মাহাতাব হোসেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মোঃ তামিম ও মোঃ হেলাল হোসেন হৃদয়। বরযাত্রীদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হলেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা সেকান্দার আলী আকন, মোঃ লিটন,মো ইউসুফ, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও মোঃ জাকির হোসেন। অবস্থা গুরুতর দেখে জাকির হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উত্তর বড় লবণ গোলা গ্রামের মোতাহার উদ্দিন মাস্টার বাড়ির জামে মসজিদের ইমাম মোঃ আসাদুজ্জামান জিলানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বরযাত্রীদের আমি শুধু বলেছিলাম অন্যের জায়নামাজ ব্যবহার করার পূর্বে অন্তত অনুমতি নেয়া উচিত ছিল। একথা বলার সাথে সাথেই বর যাত্রীদের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে আসেন। আমি তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করার সাথে সাথেই একজন আমার নাকের উপর ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করে ফেলে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তারা মসজিদ ভেতর থেকে আটকিয়ে ২০-২৫ জন মিলে স্থানীয় ৪-৫জন মুসল্লিকে বেদম মারধর করেন।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বরযাত্রীদের একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ সেকান্দার আলী আকন বলেন, আমরা যে বাড়ির বরযাত্রী সেই বাড়িতে নামাজ না পড়ে এখানে কেন নামাজ পড়তে আসলাম, এই প্রশ্ন করেই আমাদেরকে বিব্রতবোধ করান। কনেপক্ষ ইমাম জিলানকে দাওয়াত দেয়নি এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ তিনি আমাদের উপর খাটিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ইমাম সাহেব মসজিদের মাইক ব্যবহার করে মসজিদে হামলা হয়েছে এরকম একটা বার্তা ঘোষণা করায় এলাকাবাসীর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ আমাদেরকে ঘিরে ফেলে। আমাদেরকে এমনভাবে পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে যা এরকম নির্যাতন আমরা কেউ কোনদিন দেখিনি। তাৎক্ষণিক পুলিশ ব্যবস্থা না নিলে ওদের হাতে আমাদেরকে নির্মমভাবে মরতে হতো।
এ ব্যাপারে বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনাটা শুনেই আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে চলে এসেছি এবং উভয়পক্ষকে নিভৃত করার চেষ্টা করেছি। হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেছি। চেষ্টা করছি উভয় পক্ষকে একটা সমঝোতার মধ্যদিয়ে সুষ্ঠু ফায়সালা করে দেবার।
একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা মোঃ জহিরুল হক পনু বলেন, যেহেতু আমরা সবাই একই এলাকার লোক। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেহেতু ঘটিয়ে ফেলেছে, আমরা নিজেরাই ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটা সমঝোতার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হব।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ বরগুনা জেলা শাখার আমির অধ্যাপক মাওলানা মোঃ মহিবুল্লাহ হারুন বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়েছিলাম এবং উভয় পক্ষের আহতদের দেখে এসেছি মসজিদের ইমাম আসাদুজ্জামান ছিলাম সর্ব মহলের কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব তাকে শারীরিক আঘাত করায় এলাকার ক্ষোভের মাত্রাটা বহুগুনে বেড়ে গেছে। উভয়পক্ষকে প্রশমিত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। চেষ্টা করব উভয়পক্ষকে একটা সমঝোতার মধ্যদিয়ে ফয়সালা করে দেবার।
এ ব্যাপারে বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান জগলুল হাসান বলেন, ঘটনাটি জেনেছি। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দায়েরের প্রেক্ষিতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : কাজী জহির উদ্দিন তিতাস
প্রধান আইন উপদেষ্টা : এড: ড. মুহাম্মদ শাহজাহান, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট :: আইন উপদেষ্টা : এড: মো: শাহপরান (পরান), আপীল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট। সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : মো: সাইফুল ইসলাম সাইফুল : উপদেষ্টা : মোঃ শফিকুল ইসলাম শাকিল প্রধান সম্পাদকঃ মোঃ শাহনেওয়াজ হীরা
কপিরাইট @ দৈনিক চ্যানেল নিউজ