বিএনপি এত সাহস পায় কোত্থেকে : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি এত সাহস পায় কোত্থেকে : প্রধানমন্ত্রী

চ্যানেল নিউজ, ঢাকা : বোমাবাজি ও অগ্নিসন্ত্রাস করে বিএনপি ভোট বানচাল করতে চাচ্ছে, অভিযোগ করে এদের বিরুদ্ধে সবাইকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বোমাবাজি-খুন-অগ্নিসন্ত্রাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়। তিনি বলেন, ‘আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনে হাত পুড়ে—এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে, দুটো আগুন দিয়েই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ নয়। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।’
বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি সিলেটে হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেন। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।
নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই নৌকা নুহু নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আজকে আপনাদের কাছে আমার আহ্বান, আগামী নির্বাচনে আমরা যাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী দিয়েছি, তাদের ভোট দিয়ে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন।’ এ সময় তিনি হাত তুলে ওয়াদা করতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। দেশের মানুষ বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে পেরেছে বলেই আমরা এটা করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
জিয়াউর রহমানের শাসনামলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল, তারা গণমানুষের দিকে তাকায়নি। মানুষের কল্যাণ করেনি। তারা লুটপাট, জনগণের ভোট চুরি—এই চুরি করাটাই ছিলে তাদের কাজ। তারা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কোনও কাজ করেনি। সেটা করলে অনেক আগেই বাংলাদেশের উন্নতি হতে পারতো। তারা এসেছিল ক্ষমতাকে ভোগ করতে। দেশে ফিরে এসে আমি দেখেছি—কীভাবে ক্ষমতা ভোগ করে কুক্ষিগত করে রাখে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে গ্যাস বিক্রি করতে চাইনি বলে আমাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। ক্ষমতায় আনা হলো বিএনপিকে। ভোটচোর, জনগণের সম্পদ চোরকে ক্ষমতায় বসালো ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া। যার কারণে তার পিঠে বাহবা দিয়ে ক্ষমতায় বসালো। ফলাফল হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি আর দুঃশাসন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া যে কূপ খনন করে গ্যাস পায়নি, আওয়ামী লীগের আমলে আমরা সেই কূপ খনন করে কেবল গ্যাস নয়, তেলও পেয়েছি। আল্লাহ জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানেন, ওদের কাছে দিলে সব নয়-ছয় করবে। আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। ঠিক কিনা বলেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন উন্নয়নের কাজ করছি, তখন বিএনপির কাজ হচ্ছে পেট্রোল দিয়ে মানুষ পোড়ানো। যারা লুটেরা, খুনি, হত্যাকারী, দুর্নীতিবাজ, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী তারাই এ দেশের মানুষকে আগুন দিয়ে পোড়ায়। নির্বাচন বানচাল করতে চায়। লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয়, আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। কোনও মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ থাকলে এইভাবে আগুন নিয়ে মা-সন্তানকে পোড়াত পারে? আজ আগুন দিয়ে বাস পোড়াচ্ছে, রেল পোড়াচ্ছে। ২০১৩ সালে নির্বাচন ঠেকাতে অগ্নিসংযোগ করে, গাড়ি পোড়ায়। তাদের আগুনে ৩ হাজারের মতো মানুষ পুড়ে যায়। পাঁচশর মতো মানুষ মারা যায়। তবে অগ্নিসংযোগ করে তারা ২০১৩ সালের নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে এলো। কিন্তু ভোট করবে কী? ওই লন্ডনে বসে একটা নমিনেশন দেয়। গুলশানে বসে একটা দেয়, আর পল্টন বসে আরেকটা। নমিনেশন বাণিজ্য শুরু করে দিলো। এই সিলেটেও বাণিজ্য করেছে। বাণিজ্য করেই তাদের নির্বাচন শেষ। দোষ কার? দোষ তো তাদের।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারম্যান কে? মানিলন্ডারিং, গ্রেনেড হামলা, অস্ত্র চোরাকারবারি এবং দুর্নীতি। তাদের দুর্নীতির সাক্ষী এফবিআই দিয়ে গেছে। কোনও দিন রাজনীতি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে চলে গেছে। আর এখন ওখানে বসে বসে হুকুম দিয়ে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়। এটা হলো তাদের চরিত্র।’
সিলেট অঞ্চলে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সিলেটবাসী সবসময় আমাদের পাশে আছে। আমরা সিলেটে যত উন্নয়ন করেছি, জানি না সিলেটবাসী সেটা মাথায় রাখবেন কিনা?’ সিলেটে মেট্রোরেল স্থাপনের সম্ভাবনা পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে সরকার প্রধান উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের কাজই হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। স্মার্ট নাগরিক আমরা গড়ে তুলবো। স্মার্ট সরকার, স্মার্ট সোসাইটি করেই আমরা আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

themesbazartvsite-01713478536